Skip to main content

এবং ব্যক্তিগত বাবুয়া...|| -কৃষ্ণেন্দু সাঁতরা


       
অনেক দিন পর রেডিও শুনছিলাম ।গান হচ্ছে ।নতুন একটা সিনেমার গান ......
      "সে খুব ভবঘুরে,সাজায় বহুদুরে,
        আলেয়া জুড়ে জুড়ে,আলোর স্তূপ।
        আমার হাঁটু জলে স্মৃতিরা ভেসে চলে,
        জীবন কথা বলে,বাকিরা চুপ।"

আমিও চুপ করে গেলাম আর মনে হতে থাকল.....
এত বড় পৃথিবীতে অনেক ছোটো ছোটো ঘটনাও তো ঘটে।সেসব ঘটনা কাগজে বা নিউজে আসার জন্যও যথেষ্ট বড়সড় হয়ে বেড়ে ওঠেনা কোনদিন।বাবুয়ার মতোই তার ঘটনাগুলোও তেমনই ছোট্ট ছোট্ট ।বাবুয়ার অতি-সংক্ষিপ্ত জীবনের সবটা আমি হয়তো পুরোপুরি কোনদিন লিখতেও পারব না।"হলদে জামা বাবুয়া"-নামের যে ব্যক্তিগত ডাইরিটা, আমি লিখতাম সেটা হারিয়ে গেছে- খুঁজে পাচ্ছি না।ফেসবুকে বাবুয়াকে নিয়ে যেটুকু ছাইপাঁশ লেখা জোখা আছে এবং আমার স্মৃতিতে বাকিটা-ই এখন সম্বল।বাবুয়ার মৃত্যুটা ঘটে যায় প্রাক-কৈশরেই।তবু বাবুয়া তার ছোট্ট জীবনটা নিয়ে আমাকে টুকি দেয় আর বলে -"ধাপ্পা! তুই বন্ধু ধরা পড়ে গেছিস.... !"
আমি বিশ্বাস করি-আপনাদের প্রতি জনের একজন -ব্যাক্তিগত বাবুয়া আছে(ঈশ্বর তাঁদের জীবিত রাখুন), তাই সাহস করে এই ইমোশনাল- বাবুয়াকে বহন করে চলেছি.......।

বাবুয়া তাঁর হলুদ জামাটা গায়ে দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে শীতের সকালে আমাদের দাওয়া লাগোয়া রান্না ঘরে উঁকি মেরে বলত-
-''বড় মা,রুটি আছে?"
-"হ্যাঁ।বাবুয়া এই আঁচের কাছটায় বসে পড় চুপটি করে...চা হোক তারপর খাবি।অনেক বেশি আটা মাখা হয়ে গেছে তো-রুটি অনেক বেশিই হবে.....।"

মা'র টেনডেন্সি ছিল -বেশি করে খাবার বানানো আর বেঁচে যাওয়া খাবার পাড়ার ছোটোদের ডেকে ডেকে খাওয়ানো।আমাদের তখন গরীব পাড়ার মাঝে একমাত্র-  মধ্যবিত্ত সঙ-সাজা সংসার।যে সংসারে আমাকে নিয়ে সাড়ে সাতজন !খাদ্য সুরক্ষার ব্যাপারে বাবা-মুক্তহস্ত ছিলেন ।সামান্য মেনু, কিন্তু পর্যাপ্ত খাদ্য যেন জোগান থাকে সেদিকে তিনি লক্ষ্য দিতেন।আর আমার ধারণা- মা,ইচ্ছে করেই ভুল করার ছলে, বেশি আটা মাখতেন বা ভাতের চাল নিতেন ।

মা তাঁর চাদরটা বেশির ভাগ দিনই খুলে বাবুয়ার গায়ে জড়িয়ে দিতেন।আমার কেমন একটা রাগ-রাগ হতো....এমনিতেই আমার ঠাকুরমা আমাকে-মেলা থেকে কুড়ানো ছেলে বলে রাগাতেন তাই নিজের মা'য়ের এমন পরের পুত্রের প্রতি স্নেহ দেখে সেই কুড়ানো-তত্ত্বটা দৃঢ় হতে থাকতো।বাবুয়া হয়তো কোনদিনই স্কুলে যেত না, যদিনা স্কুলের প্রথম দিনের প্রথম আধঘন্টার মধ্যে ঘটা করে কেঁদে কেটে আমি বাড়ি চলে আসতাম! আমার স্কুল যাওয়ার সঙ্গী হয়ে বাবুয়াও স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল।তখন আমার কাছে স্কুল যাওয়াটা আনন্দের হয়ে উঠল।বাবুয়া আর আমি কাঁনানদী টপকে স্কুলে যেতাম আর বর্ষার দিনে একটু ঘুরে -কাঠের পোল পেরিয়ে ।আমার কাছে আকর্ষণীয় ছিল-স্কুলে যাওয়াটা আর ছুটির পর বাড়ি ফেরাটা।এই যাওয়া আর আসার- মাঝের সময়টা স্কুলে থাকার কারনে সেখানে স্কুলের প্রয়োজনীয় প্রথাগত শিক্ষা হত।কিন্তু এই যাওয়া আসার পথে সঙ্গী বাবুয়ার কল্যাণে অদ্ভুত সব শিক্ষা সম্পূর্ণতা পায়। যেমন ধরুন- আম গাছে ঢিল মারার প্রকৃষ্ট অ্যাঙ্গেল কিরকম হওয়া উচিত বা লিচুগাছের কাঠবেড়ালির মতো আরোহণ পদ্ধতি বা আইসক্রিম-ওয়ালাকে চুরি করা আলু দিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার মধ্যে যে কোন অন্যায় থাকতেই পারে না -এবং এগুলো শৈশব সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে - তাই এসব উচ্চমার্গের কার্যাদি যেমন তাঁর সান্নিধ্য-জাত ও রপ্তও করেছিলাম,তেমনই সে অকপট সত্যি বলার শিক্ষাটাও শিরা ধমনী রক্তের স্রোতে মিশিয়ে দিয়ে গেছে।যদিও ইদানিং রক্তে শুধুই দূষণ মিশছে আর আমি বোধহয় ক্রমশই মিথ্যে বলা রপ্ত করছি....।

একবার স্কুলে,টিফিনের সময় খেলতে খেলতে আমার চটি-জুতোটা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।বাবুয়াও অনেকটা সময় ধরে আমার সাথে খেলার মাঠ -ক্লাস ঘর-হেডস্যারের চেয়ারের তলা-লালটুর টিফিনবাক্সের ভিতর-মনোরমার কাধের ঝোলাব্যাগের ভিতর ইত্যাদি ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় ও সম্ভব্য স্থানে আমার চটিজোড়া খুঁজে ক্লান্ত হয়ে বলল....
-"তুই চিন্তা করিস না!সোজা সাপ্টা বড়মা'কে বলে দিবি...হারিয়ে গেছে....!"
আমি চুপ করে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম-আমার বাবা গত সপ্তাহে যে চটিজোড়া আমার দীর্ঘ বায়ানাক্কার জন্য- সংসার খরচ বাঁচিয়ে কিনে দিয়ে ছিলেন, আমি সেই পেয়ারিসি অজান্তা-হাওয়াই চপ্পলকে ,ইলোরার গুহার অন্ধকারে হারিয়ে গুহামানবের মতো খালি পায়ে- কোন চন্দ্র বদনে বাড়ির উঠানে দাঁড়াবো?সাড়ে সাত জনের সংসারের হাজারো ধেয়ে আসা প্রশ্ন বান আমি সামাল দেব কিভাবে? কী বলব?ওই টুকু আট বছরের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সাজিয়ে বানিয়ে কিই বা বলতাম......

যখন বাড়ি পৌঁছে খালি পা'য়ে-"জুতো কোথায়? "প্রশ্নের সামনে প্রায় একঘন্টা দাঁড়িয়ে, মাথা নীচু করে ঘেঁমে কাঁদবো কী কাঁদবনা ভাবছি, ঠিক তখনই দরজা ঠেলে আমাদের উঠানে, বাবুয়া  এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে পরিস্কার ভাবে তাঁর বড়মা'র দিকে তাকিয়ে বলল.....
-"ওর জুতো হারিয়ে গেছে ....খেলতে খেলতে কোথায় রেখেছে মনে নেই ....আমরা খুঁজেছি, কিন্তু কোত্থাও নেই....!"
মা, আমাকে শান্ত ভাবে বলেছিল.....
- "বাবুয়া যে কথাটা বল্ল, তা বললেই পারতিস-অত ভয় পাওয়ার কী আছে!সত্যি কথার দোষ নেই! হাত মুখ ধুয়ে নে আজ লুচি আলুর দম হয়েছে ....আর বাবুয়া তুইও হাতটা ধুয়ে নে ......ময়দামাখা বেশিই হয়ে গেছে .....!"
সত্যিই তো,সত্যি- বলাটা সহজ না হলেও- সত্যির চেয়ে সহজ কিছুই হয় না।

একবার আমার ঠাকুরমা সক্কাল সক্কাল তাঁর প্রাচীন খিস্তির ঝাঁপি খুলে আকাশ বাতাস পুলকিত করে,আমাদের বাগানে দাঁড়িয়ে তাঁর কাঁঠালের ঘাটতি বা আমগাছের উপর হয়ে যাওয়া অবৈধ লুন্ঠনের প্রতিবাদে লাগাতার খিস্তি দিচ্ছেন আর আমি সদ্যখোলা ঘুম ভাঙা চোখে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম ।

-"নদীর ধেরোরা .....চাষ করে খেতে পারে না?
  আমাদের বাগানের আম আর কাঠাল কি খুব মিষ্টি? "

মনে মনে আমাদের বাগানের আম কাঁঠালের স্বাদের কোয়ালিটি ভাববার চেষ্টা করলাম এবং বুঝলাম ঠাকুরমা মিথ্যা তথ্য সহ খিস্তিবানী প্রয়োগ করছেন ।একবার আমাদের বাগানের বিস্বাদ কাঁঠাল খেয়ে আমার খাবার রুচি চলে গিয়েছিল এবং তিনদিন যাই খাই তাই গ্যাদালপাতা মনে হচ্ছিল ! আর আম ?যে কিনা জাতীয় ফল তা যে নিতান্তই ম্যানুপুলেশন আর বিরোধী চক্রান্তেই মর্যাদা লাভ করেছে তা আমাদের বাগানের আম খাইয়েদের নতুন করে বোঝানোর কোন দরকার নেই!ওর থেকে কলাগাছের কাঁচা থোড় ব্রেটার অপশন!আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম এসব বাবুয়ার কাজ।কিন্তু,ঠাকুমা লাগাতার তার গালাগালি আর শাঁপ শাপান্ত করছিল ......

--"আমার বাগানের কাঁঠাল খেগোরা যমালয়ের দক্ষিণ দিকে যা...
   তোদের মরণ হোক....."ইত্যাদি ইত্যাদি

ঠিক তখনই একটা কাঁঠাল মাথায় করে বাবুয়া আমার ঠাকুরমার কাছে এসে ফেলে দিল যেটার একটা অংশ ছাড়ানো! আর বল্ল-
-"এই  কাঁঠাল তো মনিষ্যি কেন, বাদুড়েও ছোঁয় না!বিচ্ছিরি খেতে....রাখো তোমার কাঁঠাল.....এসব কাঁঠালের জন্যে খিস্তি দিলে খিস্তির অপমান হবে....।আর তোমাদের এতো বয়েস হল ....বাচ্চারা ফলমুল চুরি করবে না তো তুমি করবে?গাছে উঠতে পারবে?এই তোমার কাঠাল ফেরত দিলুম,এবার খিস্তি ফিরিয়ে নাও....."

ঘৃণারকে ভালোবাসা দিয়ে কী ভীষণ জব্দ করা যায়!!তখন- অভিশাপ প্রদানকারী কেও অভিশাপ গিলে ফেলতে হয়। না!আমি সেদিনের তাঁর চুরিটাকে সমর্থন করছি না।যদিও সে তাঁর চুরিকে কখনই 'চুরি' বলে ভাবেইনি। বাবুয়া কোনদিনই এই 'এরগাছ' 'ওরগাছ' থেকে ফল-মূল না বলে সংগ্রহ করাটাকে 'চুরি' হিসেবে- ধরেনি! তাঁর ক্ষুদ্র জীবন-দর্শনে, পৃথিবী গাছ পালা পশু পাখি সূর্য চাঁদ ফল ফুল -সবই তাঁর! সেও সবার।এখন বেঁচে থাকলে এই দেশ কাল পাত্র- জাত পাত ধর্ম গুলিয়ে সে একটাই আস্ত পৃথিবী বানাতো,যেটা তাঁরই পৃথিবী।

ঠাকুমা লজ্জ্বায় পড়ে গিয়েছিলেন ।কারণ বাবুয়াই ঠাকুমাকে -রোজকার পুজোর জন্যে ফুল আর পানপাতা- সুপাড়ির জোগাড় করে দিত। যদিও তাঁকে যমেরবাড়ি বা নদীর ধারে পাঠানোর মতো শাঁপশাঁপান্তের গালি দেওটার জন্য আমি ক'দিন ঠাকুরমার সাথে কথা-বলা বন্ধ রেখে ছিলাম। কিন্তু ঠাকুরমাকে,বাবুয়া তাঁর পান সুপারির সাপ্লাই কখনও বন্ধ করেনি বা পুজোর ফুলের জোগানও বন্ধ করেনি।আদতে,তাঁর কিছুতেই কিছু এসে যেতো না।তাঁর জন্য শৈশবে যে 'মনের আদল'- তৈরি হয়েছে তাই এখনও হয়তো বহন করে চলেছি আর তাঁর সেই একটি মাত্র হলুদ জামার -রঙ!

বাবুয়া বহুদিন হলো এপাড়ে নেই।শুধু আমি তার ক্ষুদ্র স্মৃতি বয়েই বেড়াচ্ছি মাত্র ।গতরাতে স্বপ্নে দেখলাম-  তাঁর ওপাড়ের যমালয়ের দক্ষিণ দিকে -বাবুয়া তাঁর হলুদ জামাটা গায়ে দিয়ে - তাঁর বড় মা'কে বলছে....
-''বড় মা,রুটি আছে?"
আমার মা'টা তাঁকে নিজের চাদরটা জড়িয়ে দিয়ে বলছেন- "উনানের পাশে বস!রুটি অনেক বেশিই হবে.....!"

শ্লা!যে স্নেহ ধরে এতদিন কাঁদি হাসি-সে স্নেহ এখনো রক্তের সম্পর্ক গ্রাহ্যি করেনা.....আমি তোকে হিংসে করি বাবুয়া....
তবু আমি তোকে সারাটা জীবন বয়েই বেড়াবো .....
ছাড়ব না তোর- হলুদ জামা!কারণ তুই তো আমার শৈশবে জ্বলে ওঠা প্রথম আলো.......।



("হলদে_জামা_বাবুয়া "থেকে.....)

Popular posts from this blog

কাব্যগ্রন্থ ।একতারার সুর । পলাশ পোড়েল ।বই

  কাব্যগ্রন্থ : একতারার সুর । পলাশ  পোড়েল AKTARAR SUR by PALASH POREL book published on- 2020 ।  একটি বংeZIN প্রয়াস: ‘ই-বই’ প্রকাশকাল-ইং ২০২০ সাল।   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧     কৃষ্ণপ্রেমের অলীক সুতোয় যে সুর বেজে ওঠে কবি মনে তা যখন কাব্য রূপ নেয়- সেই মধুর মূর্ছনা, আছন্ন করে পাঠককে ।কবি পলাশ  পোড়েলের কবিতা শুধু আছন্নই করে না, বরং কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –‘একতারার সুর’ কাব্যগ্রন্থ।প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে- কবির  ভালোলাগা সকলের হয়ে ওঠে। কবিতা লেখার জগতে নব্য এক মননের চেষ্টা-একতারার সুর কাব্যগ্রন্থ- টি ।বংeZIN প্রকাশনী তাকে সম্মান করে । কবিতাগুলি যদি পাঠকের ভালো লাগে তবে-এই প্রচেষ্টা সফল । -        প্রকাশক  [বংeZIN প্রকাশনী]  

বই ।। গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি ।।পলাশ পোড়েল

কাব্যগ্রন্থ ।।  গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি।।   পলাশ পোড়েল   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧   কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি । পলাশ  পোড়েল বোষ্টমির প্রেম –সাধনা- আগুন রূপের-  নিত্য পুড়ে যাওয়া –কাব্য রূপে কবিতার ছন্দে ফুটে ওঠে - কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি –তে। কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনন্য অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –সাধনাকে জীবন করে বেঁচে থাকার গল্প বলে- গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি   কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে-   ভালোলাগা আর ভালোবাসা - সকলের মনে অনুরণন তোলে।

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১ (Chasing the Monsoon-Alexander Frater থেকে অনুবাদ) (কপিরাইট- অমিতাভ সেনগুপ্ত ।। বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত নয়।)  (১) প্রথম যে শব্দ শুনি তা ছিল বৃষ্টি পড়ার। মনে হয় একধরনের ধাতব ভার ও ভর থাকে উষ্মমন্ডলীয় বর্ষার। সেটাই অঝোর ঝরছিল যখন আমার মায়ের প্রসব ব্যাথা শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপের ছোটো মিশন হাসপাতালে। বৃষ্টি ঝরেই চলেছিল তাঁর প্রসব কালে। আমি ভূমিষ্ঠ হবার কিছু পরেও শোঁ শোঁ আওয়াজে বাইরের ঘন পত্রগুচ্ছের আড়াল ঠেলে ঝালাই করা লোহার ছাদে বাজনা বাজাচ্ছিল বৃষ্টি। মাকে প্রসব করাচ্ছিলেন আমার বাবা। যে কোনো দিকেই বহু হাজার মাইলের মধ্যে উনিই তখন একমাত্র চিকিৎসক। সপ্তাহে বহুবার জরুরি কলে যেতেন মোটর বোটে । অধিকাংশ সময় প্রত্যন্ত গ্রাম, জনবসতিতে রোগীর কাছে পৌঁছতে পাড়ি দিতেন দূর দূরান্ত। সুতরাং তাঁর কাছে নিছক কৌতুহলের বিষয় ছিল না আবহাওয়া । ক্রমাঙ্ক করা কাচের বৃষ্টি মাপার যন্ত্র, হাসপাতালের বাগানে রাখা লড়ঝড়ে বায়ুমানযন্ত্র দিয়ে বৃষ্টি মাপতেন এবং নোটবন্দী করতেন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, রোদের ঘন্টা মিনিট, বাতাসের গতি ও নিশানা...