মেয়েদের দলটা পুজোর এক-সপ্তাহ আগে
বয়েজ-স্কুলের স্যারদের একটা বীণার ছবি আঁকা- চিঠি দিয়ে নেমন্তন্ন করে গিয়েছিল।আর
একটা বছর-সতেরোর বয়েজ-স্কুলের ছেলের দল, সরস্বতীপুজোর দিন গার্লস স্কুলে ঢুকলো
পুষ্পাঞ্জলি দিতে এবং সমবেত মন্ত্র উচ্চারণের ফাঁকে ফাঁকেই চোখের দৃষ্টি বারংবার
ছুঁয়ে গেল-নিত্য ফ্রকপড়া ক্লাস-এইটের হঠাৎ 'শাড়ি পড়া' সাহসী চোখে।বা অঞ্জলির সব
ফুল মাতৃচরণের স্পর্শ পেল না এবং কিছুফুল উড়ে গেল শ্যাম্পুকরা আনমনা কেশরাশি
লক্ষ্য করে।অলিখিত একটা বাংলা প্রেম দিবসে-দুটি সাইকেল পাশাপাশি সমান্তরাল এবং
সরলরৈখিক চলে যাচ্ছে একটা স্কুল দু'টো স্কুল -বাজার চত্বরের পাশ দিয়ে সিনেমা হলের
দিকে......।না!এসব বাজে
কথা নয়।
এটাই সমাজের বিবর্তন যা ধরে এগিয়ে গেলে হয়তো- আপনি দু'একটা নতুন প্রেমের
সূচনা পর্বের আজও সাক্ষী হতে পারেন ।এখন সরস্বতী পূজায় সেই -'বাংলা প্রেম দিবস'
জাতীয় বিষয়টা কমে যাচ্ছে আর জায়গা নিচ্ছে 'সেলফি'কেন্দ্রিক- একটা 'ডিজিটাল একলা'-র
জগৎ। আমি কতদূর কী বুঝিয়ে বলতে পারব জানি না......এখনের ছেলে-মেয়েরা 'প্রেমিক
প্রেমিকা' হওয়ার থেকেও বেশি পছন্দ করছে-'ক্রাশ-হয়ে' কাটিয়ে দেওয়া, আর
অন্যদল 'ক্রাশ-খেয়ে'! যদিও কোনটাই হেয় করার নয়-সবটাই যুগধর্মের সাথে পরিবর্তিত হতে
থাকে এবং সেটাই স্বাভাবিক ।
হয়তো
যুগধর্মের নিয়মেই-দেবী সরস্বতীর রূপের বা আঙ্গিকের পরিবর্তনও হয়েছে বারংবার।
প্রতিমা শিল্পীর বাড়ি ঘুড়ে অনেক প্রতিমা দেখলাম।প্রতিমারা আর কিছু সময় পর মন্ডপে
রওনা দেবে।কিছু প্রতিমা ট্রাডিশনাল আর কিছু প্রতিমার গঠন শৈলী সাহসী।একটা প্রতিমার
সামনে চমকে-থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম।
অনেকেই
হয়তো বলবেন- 'এ কেমন প্রতিমা?আমাদের পাড়ার সেলফি তোলা সরকারদের মেয়েটার মতো
না!'।হ্যাঁ,প্রতিমা তার গড়ন শৈলী পাল্টাচ্ছে ।আগের বছর স্কুটিতে করে যে দেবীর ছবি
স্যোশাল মিডিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তাও কিন্তু পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা মেনেই- কোন
এক ক্লাবের ছেলে-মেয়েদের অর্ডার মতোই কোন এক মৃৎশিল্পীর গড়ে তোলা প্রতিমা।
একদল আমরা" বলেছি-"রুচিবোধ নিম্নগামী হচ্ছে "! আবার একদল বলেছি- সময়ের দাবি মেনে শিল্প তার 'ফর্ম' পাল্টাচ্ছে।যেমন একসময় সরস্বতী ঠাকুরের- বুদ্ধমূর্তি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল বা দুটি-হাসের লেজ জুড়ে গিয়ে একটা সিংহাসনে বসা -সরস্বতীর আশীর্বাদের হাতে চাঁদমালার মাতৃমূর্তিটি। প্রতিমার চিরায়ত আঙ্গিকেরও পরিবর্তন হয়েছে।ট্রাডিশনাল ফর্মুলাতেও বাদ্যযন্ত্রটির আঙ্গিক পাল্টেছে এবং হাতও।সজ্জায় কাপড়ের ধরণ, গহনার ধরণ ইত্যাদি ইত্যাদি ।
দুর্গাপুজোর মতো বা কালিপুজোর মতোই থিমের প্রভাব
সর্বত্রগামী হয়ে গেছে।অর্থাৎ একটা ভাবনা বা চিন্তনকে -প্রতিমার অনুষঙ্গে সকলকে
জানাতে হবে বোঝাতে হবে-এই বোধ সমাজে কাজ করে বা যদি সরস্বতী পুজোর ক্ষেত্রে ধরি তবে
তা যুবসমাজ প্রভাবিত বা বয়ঃসন্ধির আবেগ প্রভাবিত ।কারণ সরস্বতী আরাধনায় যে বয়সের
ছেলে মেয়েরা সক্রিয়তা দেখায় সেখানে-শৈশব কৈশোর এবং বয়ঃসন্ধি আর যৌবনের আধিক্য ।শিল্পকলার দেবীর
আরাধনায় যে শিল্পী-মনের প্রকাশ ঘটছে তাই হয়তো আধুনিক মনন।তাকে অস্বীকার করে
প্রজন্মকে দোষারোপ করাটা সহজ কিন্তু তা কী যুক্তি সম্মত? যদি তাই হয় তবে আমাদের কৈশোর বা বয়ঃসন্ধির ফুল-ছোড়াটা ভুল
ছিল বা পাশাপাশি প্রথম হাত ধরে, হেঁটে যাওয়া শাড়িপড়া-কিশোরী আর সদ্য-গোঁফ গজানো
ছেলেটাও খুব জঘন্য আর খারাপ ছিল?
যাক!নিয়ম মেনে- আবার সরস্বতী পুজো আসছে ।সুতরাং গেট
রেডি-ফর প্রার্থনা- "এবারের মতো পাস করিয়ে দাও মা.....প্লিজ! "হয়তো মা তখন সন্তানদের সাথে মৃদু মস্করা করে বলবেন-
"পুজোর আগে কুল খাওয়ার সময় মনে ছিল না? সারারাত চ্যাটে ব্যস্ত থাকার সময় মনে ছিল না? বইকেনার টাকায়- অ্যামাজন প্রাইম রিচার্জ করে অ্যাভেঞ্জার্স
সিনেমা দেখার সময় সর্বশক্তিমান হিসেবে কাকে মনে ঠাঁই দিয়েছিলে বৎস?"
-" আর হবে না- মা!এবারের মতো পাস করিয়ে দাও গো
মা।"
-"তথাস্তু!সব পাশ।"