Skip to main content

ফাইনম্যান।। দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত



ফাইনম্যান।। দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত
"আসুন স্যার । দাঁড়ান, অন্ধকার । মোবাইলের টর্চটা জ্বালাই। অজিতেশ অবাক । এমন ঘুপচি সিঁড়ি দিয়ে মানুষ চলাফেরা করতে পারে ? কিন্তু কী করবে ! দেহোপজীবিনীর সস্তা ডেরায় আসতে গেলে তো অন্ধকার গলিগালা পেরোতেই হয় খরিদ্দারদের। সে না হয় এসেছে অন্য কাজে। সঙ্গে স্ত্রী । দুজনেই ডাক্তার। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের কথা আলোচনা করতে করতেই পায়েলের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল।

"হ্যাঁ গো, ওদের চলবে কীভাবে?"

শহরের বিখ্যাত এন্ডোক্রিনোলজিস্ট অজিতেশ । রোগীর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির হাল হকিকত বুঝে ফেলে মুহূর্তে ।কিন্তু স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেল না।দিনের মধ্যে পঞ্চাশবার হাত ধুচ্ছে, স্যানিটাইজার মাখছে ভাইরাসের ভয়ে। এখন যৌনকর্মীদের কাছে কেউ আসবে না। স্বাভাবিক । না খেতে পেয়েই ক্রমশ মরে যাবে ওরা। নিশ্চুপে। খিদে না ভাইরাস কোনটা বেশি খতরনাক গুলিয়ে গেল অজিতেশের। পায়েল একরোখা। একবার মাথায় ঢুকেছে মানে যাবেই।

"ছাড়ো তো ! ওসব এনজিও মারফত টাকা দেওয়ার মানে হয় না । নিজেরাই যাই চলো। হাজার পাঁচেক টাকার চাল ডাল কিনে নিয়ে যাই। আর কিছু ওষুধ, মাস্ক।" এতকাল ফেমিনিস্ট বলে বন্ধুবৃত্তে যারাই পায়েলকে গালি দিত, কী এক মন্ত্রবলে রাজি হয়ে গেল। ছজনের মেডিক্যাল টিমকে আগলে নিয়ে গেলেন লোকাল সাব ইন্সপেক্টর অভীক মুখার্জি । কে বলবে পুলিশের মানবিক মূল্যবোধ নেই ! পুরনো ধ্যানধারণাগুলো দুমদাম ভেঙে দিচ্ছে করোনা।
নাহ , সেলফি তোলেনি ওরা। যীশু বলেছিলেন, ডানহাতে এমনভাবে দান করবে যেন বাঁহাত না জানতে পারে। কাকে দেখাবে বদান্যতা? কী লাভ ?
মোটামুটি জনা পঞ্চাশেক মহিলাকে মাস্ক পরা শিখিয়ে বেরিয়ে আসার সময় একটা দৃশ্যে চোখ আটকে গেল সবার।
খোলা চৌকোনো চাতালে কড়া রোদ। হাত নেড়ে নেড়ে, জোর গলায়, বই পড়ে শোনাচ্ছে একটি মেয়ে । বছর বারো তেরো হবে। সামনে জনা দশেক ছেলেমেয়ে নিশ্চুপে বসে শুনছে আর মাঝেমাঝে হেসে উঠছে।
ইন্সপেক্টর অভীক মৃদু হাসলেন। "এদের বাচ্চারা । লকডাউনে যাবে কোথায়? স্কুল বন্ধ । ঐ একটু গালগপ্পো -"
অজিতেশ ইশারায় থামিয়ে দিল অভীককে।
কয়েকটা শব্দ তার কানে এসেছে 'ফাইনম্যান','ম্যানহাটন ।'


স্ট্রেঞ্জ! পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল অজিতেশ। নীল ফুলছাপ প্রিন্টের ফ্রক পরা মেয়েটি চুপ করে গেল তখনই ।
"থামলে কেন ?"
মেয়েটি চুপ।
"গল্পের বই ?"
মিষ্টি হেসে ঘাড় নাড়ল মেয়েটা ।
" আজ তো রিচার্ড ফাইনম্যানের জন্মদিন।"

অজিতেশের মুখ দিয়ে কয়েক মিনিট কথা সরল না।
"ফাইনম্যান ?"
দর্শকদের মধ্যে থেকে জবাব এল , "ম্যাজিকের লোক ।"
"তোর মুণ্ডু, উনি বিজ্ঞানী।"
"এ বাবা! তুইই তো বললি উনি সব শক্ত শক্ত তালা খুলে ফেলতেন যাদু দিয়ে।"
" দূর গাধা! উনি এমন বুদ্ধিমান ছিলেন যে সব লকারের কোড ক্র্যাক করতে পারতেন। "
"আব্দুল্লা চিচিং ফাঁক বললে যেমন দরজা খুলে যেত ?"

একপ্রস্থ কুলকুল হাসির মধ্যে অজিতেশের কানে এল মেয়েটার গলা । -" বিজ্ঞানীরা সব পারে , বুঝলি। উনি বলেছিলেন , বিজ্ঞানের হাতে একটাই চাবি। সেটা দিয়ে যেমন স্বর্গের দরজা খোলে, নরকের দরজাও খোলে।
তবে কোন দরজাটা যে স্বর্গের আর কোনটা নরকের সেটা মানুষ এখনও জানে না।"
"তাহলে ?" অজিতেশ বিমূঢ় ।
"প্রশ্ন হল আমরা কি এই চাবি ছুঁড়ে ফেলে দেব আর স্বর্গে যাওয়ার রাস্তাটা বন্ধ করে দেব একদম ? নাকি আরও চেষ্টা করে যাব কীভাবে এই চাবির সবথেকে ভাল ব্যবহার করা যায়? এটাই ফাইনম্যান জিজ্ঞাসা করেছিলেন।।"
পায়েল বলে উঠল, "বিজ্ঞানের চাবিটাকে খুঁজে বার করতেই হবে।"
মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠল। "আমরা খুঁজতে বেরোব ঠিক করেছি। লকডাউনটা উঠুক। ইস্কুল বন্ধ। আমাদের একটা কম্পিউটার কিনে দেবে আন্টি ? পুরনো হলেও ইটস্ ফাইন।"


Popular posts from this blog

কাব্যগ্রন্থ ।একতারার সুর । পলাশ পোড়েল ।বই

  কাব্যগ্রন্থ : একতারার সুর । পলাশ  পোড়েল AKTARAR SUR by PALASH POREL book published on- 2020 ।  একটি বংeZIN প্রয়াস: ‘ই-বই’ প্রকাশকাল-ইং ২০২০ সাল।   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧     কৃষ্ণপ্রেমের অলীক সুতোয় যে সুর বেজে ওঠে কবি মনে তা যখন কাব্য রূপ নেয়- সেই মধুর মূর্ছনা, আছন্ন করে পাঠককে ।কবি পলাশ  পোড়েলের কবিতা শুধু আছন্নই করে না, বরং কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –‘একতারার সুর’ কাব্যগ্রন্থ।প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে- কবির  ভালোলাগা সকলের হয়ে ওঠে। কবিতা লেখার জগতে নব্য এক মননের চেষ্টা-একতারার সুর কাব্যগ্রন্থ- টি ।বংeZIN প্রকাশনী তাকে সম্মান করে । কবিতাগুলি যদি পাঠকের ভালো লাগে তবে-এই প্রচেষ্টা সফল । -        প্রকাশক  [বংeZIN প্রকাশনী]  

বই ।। গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি ।।পলাশ পোড়েল

কাব্যগ্রন্থ ।।  গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি।।   পলাশ পোড়েল   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧   কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি । পলাশ  পোড়েল বোষ্টমির প্রেম –সাধনা- আগুন রূপের-  নিত্য পুড়ে যাওয়া –কাব্য রূপে কবিতার ছন্দে ফুটে ওঠে - কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি –তে। কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনন্য অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –সাধনাকে জীবন করে বেঁচে থাকার গল্প বলে- গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি   কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে-   ভালোলাগা আর ভালোবাসা - সকলের মনে অনুরণন তোলে।

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১ (Chasing the Monsoon-Alexander Frater থেকে অনুবাদ) (কপিরাইট- অমিতাভ সেনগুপ্ত ।। বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত নয়।)  (১) প্রথম যে শব্দ শুনি তা ছিল বৃষ্টি পড়ার। মনে হয় একধরনের ধাতব ভার ও ভর থাকে উষ্মমন্ডলীয় বর্ষার। সেটাই অঝোর ঝরছিল যখন আমার মায়ের প্রসব ব্যাথা শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপের ছোটো মিশন হাসপাতালে। বৃষ্টি ঝরেই চলেছিল তাঁর প্রসব কালে। আমি ভূমিষ্ঠ হবার কিছু পরেও শোঁ শোঁ আওয়াজে বাইরের ঘন পত্রগুচ্ছের আড়াল ঠেলে ঝালাই করা লোহার ছাদে বাজনা বাজাচ্ছিল বৃষ্টি। মাকে প্রসব করাচ্ছিলেন আমার বাবা। যে কোনো দিকেই বহু হাজার মাইলের মধ্যে উনিই তখন একমাত্র চিকিৎসক। সপ্তাহে বহুবার জরুরি কলে যেতেন মোটর বোটে । অধিকাংশ সময় প্রত্যন্ত গ্রাম, জনবসতিতে রোগীর কাছে পৌঁছতে পাড়ি দিতেন দূর দূরান্ত। সুতরাং তাঁর কাছে নিছক কৌতুহলের বিষয় ছিল না আবহাওয়া । ক্রমাঙ্ক করা কাচের বৃষ্টি মাপার যন্ত্র, হাসপাতালের বাগানে রাখা লড়ঝড়ে বায়ুমানযন্ত্র দিয়ে বৃষ্টি মাপতেন এবং নোটবন্দী করতেন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, রোদের ঘন্টা মিনিট, বাতাসের গতি ও নিশানা...