Skip to main content

বৃষ্টি সন্ধানী ।পর্ব-৩।অমিতাভ সেনগুপ্ত



বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ- পর্ব-৩
(Chasing the Monsoon-Alexander Frater থেকে অনুবাদ)
(কপিরাইট- অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত নয়।)



(৩)
বছরে দু’ তিনবার কেবল আমাদেরই জন্য নির্দিষ্ট কিছু মরশুমি ভেলকি দেখাত আবহাওয়া। লাল চাঁদ দেখা যেত হারিকেনের আগে। অরূণ রঙা ভোর, তেলতেলে সবুজ সকালের মেঘ। সূর্যর দেখা যদি বা মিলত তবে তাকে ঘিরে থাকত এক বলয়। তার খোলা পার্শ্বদেশ দেখিয়ে দিত কোন দিক থেকে ধেয়ে আসছে আঘাত। এত দ্রুত নেমে যেত ব্যারোমিটার যেন সেটা পড়েই যাবে দেয়াল থেকে। সমুদ্র যেন কাচের। এক অদ্ভুত স্তব্ধতা নামত। গ্রামের আগুনকুন্ড থেকে ওঠা ধোঁয়া যেন কাঠামোয় ঢালা স্থাপত্যের স্তম্ভ উপস্তম্ভ। ঘন কালো মেঘাচ্ছন্ন খিলান দেওয়া ছাদ ধরে রেখেছে। স্পষ্ট শোনা যেত দূরের দ্বীপগুলো থেকে ভেসে আসা কুকুরের ডাক, শিশুদের কান্না।

হারিকেন সংকেত পতাকাগুলো তৈরি করতেন বাবা। প্রথামতো সেগুলো ওড়ানো হত হাসপাতালের সিঁড়ির নীচে ফাঁকা জমিতে পোঁতা পোল থেকে। সাদা পতাকা ছিল ঝড় দেরিতে আসার( ১২ ঘন্টা বাদে) সংকেত। হলুদ তাড়াতাড়ির (৬ ঘন্টা) সংকেত। ঝড় এসে পড়ার চরম সংকেত জানাত কালো পতাকা। চরম আবহাওয়ায় টিঁকে থাকার পক্ষে যথেষ্ট মজবুত হত উলের ডবল-বোনা পতাকাগুলো। আমার কাজ ছিল পতাকা তোলা এবং নামিয়ে আনা । কালো পতাকায় নজর রাখত দ্বীপের নীচু এলাকার বাসিন্দারা । কেননা পরে তাদের নারকেল গাছের মাথায় চড়ে ডাল কেটে নিজেদের বেঁধে রাখা দরকার পড়ত অনেক সময়। মসৃণ গাছগুলো বাতাসের কোনো বাধাই হত না । কোনো ক্ষতি না করেই নীচে বয়ে যেত বিশাল ঢেউগুলো।

একবারই ভয়ঙ্কর ঝড়ের চোখ আমাদের মাথার উপর দিয়ে অবিকল উড়ে গিয়েছিল বেতার সংকেতে আটকে থাকা বাধ্য বিমানের মতো। বায়ুমানযন্ত্রের খুঁটি চারা গাছের মতো ছিঁড়ে পড়ার আগে অবধি সেটা ঝড়ের গতি রেকর্ড করে ১৩০ নটস (২৪১ কিমি ঘন্টায় –অনুবাদক) অথবা বোফার্ট স্কেলের সর্বোচ্চ শক্তির দ্বিগুণ। দ্বীপের উপর আছড়ে পড়েছিল ঘুর্ণমান সমুদ্রের জল। এতই বধির করা করা ছিল বাতাসের তীব্র গর্জন যে আমরা পরস্পরের ঠোঁট নড়া অনুসরণ করে কথা বলছিলাম। ঝড়ের প্রবল অভিঘাতে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ করে কেঁপে উঠছিল বাড়ি। ঝড়ের দাপট বাড়লে মনে হচ্ছিল বাড়িটা যেন এক চলমান টালমাটাল জাহাজ বাতাসের ছোটো ছোটো মোচড়ে দুলছে। পাইনকাঠের বরগার ছাদ নুয়ে পড়ে তীব্র হ্যাঁচকা টানে। ছাদ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছিল কারণ ছাদ হারাচ্ছিল প্রতিবেশীরা । মিঃ ট্যালবয় অ্যাট পাবলিক ওয়ার্কস-এর সাবেক সম্পত্তি কেমব্রিজ ব্লু চারশো বর্গফিটের লোহার ঢেউ খেলানো চাল বাগান পেরিয়ে শূন্যে চড়ে বাঁক নিল। উড়ে গেল দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়ার দিকে।

এত প্রলয়ের মাঝেও বাবার চোখে দেখি এক আলাদা দ্যুতি। হয়ত দুর্ভাবনা ছিল তবে খুব উচ্ছ্বসিত ছিলেন। আমিও তাই। নিবেদিত আবহাওয়া প্রেমীদের জন্য এমন ধ্রুপদী প্রদর্শনী ছাউনি-ঢাকা গ্যালারিতে বসে দেখার জিনিস। (ক্রমশ)

Popular posts from this blog

কাব্যগ্রন্থ ।একতারার সুর । পলাশ পোড়েল ।বই

  কাব্যগ্রন্থ : একতারার সুর । পলাশ  পোড়েল AKTARAR SUR by PALASH POREL book published on- 2020 ।  একটি বংeZIN প্রয়াস: ‘ই-বই’ প্রকাশকাল-ইং ২০২০ সাল।   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧     কৃষ্ণপ্রেমের অলীক সুতোয় যে সুর বেজে ওঠে কবি মনে তা যখন কাব্য রূপ নেয়- সেই মধুর মূর্ছনা, আছন্ন করে পাঠককে ।কবি পলাশ  পোড়েলের কবিতা শুধু আছন্নই করে না, বরং কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –‘একতারার সুর’ কাব্যগ্রন্থ।প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে- কবির  ভালোলাগা সকলের হয়ে ওঠে। কবিতা লেখার জগতে নব্য এক মননের চেষ্টা-একতারার সুর কাব্যগ্রন্থ- টি ।বংeZIN প্রকাশনী তাকে সম্মান করে । কবিতাগুলি যদি পাঠকের ভালো লাগে তবে-এই প্রচেষ্টা সফল । -        প্রকাশক  [বংeZIN প্রকাশনী]  

বই ।। গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি ।।পলাশ পোড়েল

কাব্যগ্রন্থ ।।  গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি।।   পলাশ পোড়েল   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧   কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি । পলাশ  পোড়েল বোষ্টমির প্রেম –সাধনা- আগুন রূপের-  নিত্য পুড়ে যাওয়া –কাব্য রূপে কবিতার ছন্দে ফুটে ওঠে - কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি –তে। কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনন্য অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –সাধনাকে জীবন করে বেঁচে থাকার গল্প বলে- গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি   কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে-   ভালোলাগা আর ভালোবাসা - সকলের মনে অনুরণন তোলে।

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১ (Chasing the Monsoon-Alexander Frater থেকে অনুবাদ) (কপিরাইট- অমিতাভ সেনগুপ্ত ।। বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত নয়।)  (১) প্রথম যে শব্দ শুনি তা ছিল বৃষ্টি পড়ার। মনে হয় একধরনের ধাতব ভার ও ভর থাকে উষ্মমন্ডলীয় বর্ষার। সেটাই অঝোর ঝরছিল যখন আমার মায়ের প্রসব ব্যাথা শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপের ছোটো মিশন হাসপাতালে। বৃষ্টি ঝরেই চলেছিল তাঁর প্রসব কালে। আমি ভূমিষ্ঠ হবার কিছু পরেও শোঁ শোঁ আওয়াজে বাইরের ঘন পত্রগুচ্ছের আড়াল ঠেলে ঝালাই করা লোহার ছাদে বাজনা বাজাচ্ছিল বৃষ্টি। মাকে প্রসব করাচ্ছিলেন আমার বাবা। যে কোনো দিকেই বহু হাজার মাইলের মধ্যে উনিই তখন একমাত্র চিকিৎসক। সপ্তাহে বহুবার জরুরি কলে যেতেন মোটর বোটে । অধিকাংশ সময় প্রত্যন্ত গ্রাম, জনবসতিতে রোগীর কাছে পৌঁছতে পাড়ি দিতেন দূর দূরান্ত। সুতরাং তাঁর কাছে নিছক কৌতুহলের বিষয় ছিল না আবহাওয়া । ক্রমাঙ্ক করা কাচের বৃষ্টি মাপার যন্ত্র, হাসপাতালের বাগানে রাখা লড়ঝড়ে বায়ুমানযন্ত্র দিয়ে বৃষ্টি মাপতেন এবং নোটবন্দী করতেন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, রোদের ঘন্টা মিনিট, বাতাসের গতি ও নিশানা...