Skip to main content

অসময়ের গদ্য ।। নিমাই জানা



অসময়ের গদ্য ।। নিমাই জানা 

(এক)
গাছ উপড়ে পড়েছে বৈশাখী ঝড়ে, হরি ঠাকুরের মাথার উপর।পাতা ছিঁড়ে ফেলছে সংবহনের নাড়ী।জ্বর হলে ঘাম দিয়ে উপসর্গ বের হয় লোমকূপে।অসম্ভব দীনতায় প্রদীপ একটি খালি ব্যাগ মাথায় ঢুকিয়ে বাদশাহী সাজে।স্কুলের আলুচাল, মাস্টাররোলি- nil.com।মিড ডে মিলের থালাগুলো উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে খরদুপুরের নৌকার মত । নারায়ন বাবুর পেনশন।লাস্ট স্টেজ এর টিউমার।পড়শি হিংসার স্পন্দন বাড়ছে আশি বছরের বুকের ভিতর ।লাবডুবের ফিকুইন্সির বিস্তর ফারাক।স্টেথোস্কোপ এর উপর পর্ণমোচী পাতা ফেলছে শংকর ডাক্তার ।উঠোনজুড়ে একাদশীর উপবাস।মনসা মন্দিরে সবাই ধূপ জ্বেলে আলুভাতে ভাত খাচ্ছে , রাতের জমায়েতে ।সংকট কতদিনের !  

(দুই)                
চাঁদের দেশ থেকে বিদায় নিচ্ছে হিন্দু-মুসলমান জৈন বই বিক্রেতা গুলো।খদ্দের না পেয়ে গাছের তলায় উল্টো ঘুমে ঘুমিয়ে  আছে নাসের।ভিআইপি রোড কেরোসিন হারিকেন নিয়ে অন্ধকারে হাটছে আলোর দিকে।মোমবাতি জ্বলে উঠলে গর্জে ওঠে থ্রী নট থ্রী,স্ফুলিংগ।তাল পাতার নিচে আমাদের কুঁড়েঘর ।
পোড়া ঘরের ভিতর থেকে আধপোড়া দুমড়ানো পুতুল সাজিয়েছে তুলতুলে সোনা ।
ঈশ্বর বলতে আধপোড়া পুতুল কে জানে । 
হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছে আলোকবর্ষ থেকে ।
গরম রোদে ফুটতে থাকে জল ভর্তি ফোস্কা । 
ভাপ উড়ছে সেদ্ধ ধান থেকে।                      

(তিন)                     
ধান গাছ সুদ্ধ কার্তিক ঠাকুর শুয়ে থাকে তিরবিদ্ধ ভীষ্মের মতো।জলের সিডেটিভ আচ্ছন্ন মায়া থেকে বেরানো বড় কঠিন।আলের উপর সংক্রমণ শিরায় দুমুখো সাপ।বাল্মীকির মত কোমায় যায় সকলে সাড়ে আটটার পর।ঘোমটা কাপড় কোমরে জড়িয়ে ধান উল্টাতে থাকে প্রজেক্ট ডাঙ্গায়।বাবাকেও দুর্যোধন মনে হয় কখনো।অলকদা বাঁশপাতা কে নিরাময় ভেবে ডুব দেয়।চিতার মতো সমান্তরাল সংসার কেবল দূরত্বই রেখে স্নিগ্ধতা মেখে নেয় জল স্রোতে।মন খারাপ হলে ভুলে যাই দরজার ছিটকিনি।কারো বাড়িতে চোর ঢুকলে শাঁখ বাজানোর দাওয়াই বড়ো শ্রেয়।ঘর পুড়ে পোড়া টাকার পুটলী বিছিয়ে চলি পহলা বৈশাখে।আমবাগানে নিম পাতা পুড়ে পুড়ে শুদ্ধ করি বুকের ভেতর হাওয়া।

( চার)                        
কোকিল ফিরে আসে দিবালোকের স্বপ্নের ভিতর ।
ওষুধ না পেয়ে, চিকিৎসা না পেয়ে , কেমোথেরাপি রোগী শহর থেকে ফিরে আসে । 
ভয়ানক মানুষগুলো ডুবতে থাকে হাটুর জলে  । 
ধান গাছের মতো অসুখে মরে যায় আগুন । 
দিনে দিনে কিভাবে খিদে কমে যায় সেদ্ধ ধানের ।
সরে যাচ্ছে ভালো থাকার শেষ সংলাপ' । 
অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার সূর্যের মতো লাল চোখ করে আদায় করছে ঘামের ফোঁটা , অতিরিক্ত ভাড়া। 

(পাঁচ)               
পাপাই একটি অভিভাবকহীন পুরুষ ফুল । 
কষ্ট দিনেও হাজির হয় স্কুল বারান্দায় ।
ফিতা কাটা হাফ গেঞ্জির চশমায় মায়ের ফেব্রিক শাড়িতে অসংখ্য বিন্দু বসায়।‌শ্রীকান্ত রংরেখার আইকন পাল্টিয়ে কতদিন না পড়ানোর হিসাব করে।মার্চ মাস থেকে টিউশন ফি না জোটে  সংসারে অশৌচ হয়ে গেছে।ফোনে সবাই রঙিন রেখা না কাটানোর কথা বলেছে বাড়িতে বাড়িতে।অতি মারির মত কদম ফুল তুলছি ধানক্ষেত থেকে।স্বপ্নে দৌড়াচ্ছি নিশিকান্ত সাউ এর পিছনে।তিনটি দেশ'র টাকা বাকি রাখা।অভাবের পিছনে কমিশন।তিনশত টাকা।ধূম হীন চুল্লীর পাশে বসে থাকি শাহীনবাগের দাদিমার পড়ার টেবিলে।মুখোমুখি বসি পাখির বাসার পাশে,রেললাইনের পাশে টাঙ্গি,দা,কাটারি জাকাত পরগনার আন্দোলনে।
    
(ছয়)
মাথা থেকে সিরিশ ফুল নামিয়ে অস্বাভাবিক সিটিস্ক্যান এ ঢুকে গেল।মাপছি ক্ষরণের মাপ।বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা স্যালাইন নাকি কেমো।পুড়ছি নাকি পোড়াচ্ছি।সরু সরু আলপথে পিচ্ছিল নদীর লোমকূপ বেয়ে ঘরের মেয়েরা পা মেশিনে ধান ঝাড়ে,ঝড় আসার আগেও।পা গড়িয়ে  জল ডুরাণ্ড হলুদ  পাড়ে পাত পেড়ে খায় ইন্দ্র বরুনের স্নায়ু ।
ফিজিক্যাল টেস্ট করে ফিজিক্স ক্লাসে।ব্লাউজের উপর দিয়ে রেখা কেটে যায় লম্বা সাদা কাগজ।হোয়াটস অ্যাপে অসুস্থ মানুষগুলো লম্বা হয়ে শুয়ে বোম্বে মেমোরিয়াল থেকে ঠাকুরপুকুর অহেতুক ঘোরাঘুরি করে।গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ফোঁটায় কেবল দুটি সিভিক পুলিশ হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে ডিউটি সারতে থাকে।

Popular posts from this blog

কাব্যগ্রন্থ ।একতারার সুর । পলাশ পোড়েল ।বই

  কাব্যগ্রন্থ : একতারার সুর । পলাশ  পোড়েল AKTARAR SUR by PALASH POREL book published on- 2020 ।  একটি বংeZIN প্রয়াস: ‘ই-বই’ প্রকাশকাল-ইং ২০২০ সাল।   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧     কৃষ্ণপ্রেমের অলীক সুতোয় যে সুর বেজে ওঠে কবি মনে তা যখন কাব্য রূপ নেয়- সেই মধুর মূর্ছনা, আছন্ন করে পাঠককে ।কবি পলাশ  পোড়েলের কবিতা শুধু আছন্নই করে না, বরং কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –‘একতারার সুর’ কাব্যগ্রন্থ।প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে- কবির  ভালোলাগা সকলের হয়ে ওঠে। কবিতা লেখার জগতে নব্য এক মননের চেষ্টা-একতারার সুর কাব্যগ্রন্থ- টি ।বংeZIN প্রকাশনী তাকে সম্মান করে । কবিতাগুলি যদি পাঠকের ভালো লাগে তবে-এই প্রচেষ্টা সফল । -        প্রকাশক  [বংeZIN প্রকাশনী]  

বই ।। গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি ।।পলাশ পোড়েল

কাব্যগ্রন্থ ।।  গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি।।   পলাশ পোড়েল   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧   কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি । পলাশ  পোড়েল বোষ্টমির প্রেম –সাধনা- আগুন রূপের-  নিত্য পুড়ে যাওয়া –কাব্য রূপে কবিতার ছন্দে ফুটে ওঠে - কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি –তে। কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনন্য অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –সাধনাকে জীবন করে বেঁচে থাকার গল্প বলে- গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি   কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে-   ভালোলাগা আর ভালোবাসা - সকলের মনে অনুরণন তোলে।

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১ (Chasing the Monsoon-Alexander Frater থেকে অনুবাদ) (কপিরাইট- অমিতাভ সেনগুপ্ত ।। বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত নয়।)  (১) প্রথম যে শব্দ শুনি তা ছিল বৃষ্টি পড়ার। মনে হয় একধরনের ধাতব ভার ও ভর থাকে উষ্মমন্ডলীয় বর্ষার। সেটাই অঝোর ঝরছিল যখন আমার মায়ের প্রসব ব্যাথা শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপের ছোটো মিশন হাসপাতালে। বৃষ্টি ঝরেই চলেছিল তাঁর প্রসব কালে। আমি ভূমিষ্ঠ হবার কিছু পরেও শোঁ শোঁ আওয়াজে বাইরের ঘন পত্রগুচ্ছের আড়াল ঠেলে ঝালাই করা লোহার ছাদে বাজনা বাজাচ্ছিল বৃষ্টি। মাকে প্রসব করাচ্ছিলেন আমার বাবা। যে কোনো দিকেই বহু হাজার মাইলের মধ্যে উনিই তখন একমাত্র চিকিৎসক। সপ্তাহে বহুবার জরুরি কলে যেতেন মোটর বোটে । অধিকাংশ সময় প্রত্যন্ত গ্রাম, জনবসতিতে রোগীর কাছে পৌঁছতে পাড়ি দিতেন দূর দূরান্ত। সুতরাং তাঁর কাছে নিছক কৌতুহলের বিষয় ছিল না আবহাওয়া । ক্রমাঙ্ক করা কাচের বৃষ্টি মাপার যন্ত্র, হাসপাতালের বাগানে রাখা লড়ঝড়ে বায়ুমানযন্ত্র দিয়ে বৃষ্টি মাপতেন এবং নোটবন্দী করতেন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, রোদের ঘন্টা মিনিট, বাতাসের গতি ও নিশানা...