Skip to main content

বিষাদগাথা । অবিন সেন














 বিষাদগাথা । অবিন সেন


এসো সুবাতাস, এসো চৈত্র রাতের হাওয়া                    
জলের মুকুরের কাছে এসে দ্যাখো
চাঁদের মুখের কাছে বসে ডাকে জল

ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল...

কোনও একদিন এমনি নামতা ছিল 
নামতা পড়ার ছল
বেলা পড়ে আসার মতো গম ক্ষেতে নেমে দেখেছো হয়ত 
শোকাতুর মাঠের আলে আমি শুয়ে আছি
আমাকে মাড়িয়ে যাচ্ছে তিনটে হরিণ?
ওহো হরিণ কোথায়?
থু থু মিথ্যুক, ও যে জ্যোৎস্নার ভুত সারা রাত জুড়ে চরে...
চরাচরে আমাকে বার বার কুড়ায় আবার 
ফেলে আসে ওই মাঠের পারে সাঁকো ভাঙা নদীর কিনারে,
জানে, তো আমি জল ভালোবাসি,
ভালোবাসি গড়িয়ে যাবার শুকিয়ে যাবার খেলা,
তাই হয়ত হরিণ বাড়ির অঙ্ক ফেলে আমাকে বার বার
ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে আসো?

জানি যদিও ফেলে দেওয়াই সহজ
বরং কুড়াতে গেলে আধেক জীবন বেড়ার ধারে 

নষ্ট ফষ্ট গরুর পায়ে মাড়িয়ে যাবার মতন

তিল তিল করে ত্বকের ভিতর, রক্তবীজের ভিতর
ছড়িয়ে পড়ে, আহা আহা নষ্ট করে কেবল,
তার থেকে ভালো স্কুলের গণ্ডির মতো ভুলে যাওয়া
বিছানা আর বালিশের মতো মিছে হয়ে যাওয়া,
টান মেরে স্মৃতি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দাও দিগন্তরেখায়...
খোয়াবের সমস্ত আস্কারা থেকে আমাকে ফেলে দাও
আগুন কুণ্ডের মধ্যে আর দূরে দাঁড়িয়ে দ্যাখো,
মানুষের রক্তবীজ, যৌবন, বীর্য সব কেমন ধুলোর মতন
গুঁড়ো গুঁড়ো পাপ আর পাপের খল খল হাসি 
সহ্যের সীমার কাছে কেমন চুপ করে বসে থাকে


তার থেকে একদিন নষ্ট বল্কল পরে 
অরণ্যের কাছে চলে যাবো, আর চাবুক হাতে 

নিজেকে সপাং সপাং চাবুক মারতে মারতে বলব

দ্যাখো সূর্যকে নীল-ডাউনে রেখে কেমন নিজেকে 
বিক্রি করে দিতে পারি, কেমন খুলে দিতে পারি
চাহিদার সমস্ত নোঙর, নত মস্তক তবু বোলো না আমায় !


আজ আর কিচ্ছু ভালো লাগে না,
শুধু ইচ্ছা করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবি...

এতো দিন যা সঞ্চয় করেছি তা কেবল ক্ষত,

বিষ আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে 
কেবল নষ্ট করেছে ভালোবাসা
আমি ভালোবাসার কাছে ক্ষত বিক্ষত হয়ে শুয়েথেকেছি 
আর একটার পর একটা দেশলাইকাঠি জালিয়ে 
শুধু উল্কি ফুটিয়েছি
তুমি তো জানো পোড়া মাংসের নেশা?

সেদিন ছাদের রেলিঙের উপর সারারাত হেঁটেছি,
না, কোনও গাঁজার নেশা ছিল না আমার

শুধু রাস্তার ওপারে ঝুল বারান্দায় ও বাড়ির বউটির 
বুক থেকে আঁচল খসে গিয়েছিল একবার, 
একবার পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে 
চুমু খেয়েছিল তাকে,
অচেনা ছেলেটি কি তার বর?
আমি শুধু দেখছি চাঁদের আলোয় ওদের
ত্বক পুড়ে গিয়েছে
অসভ্যের মতো ওরা হাহা করে চিৎকার করে উঠেছে,
আর আমি রেলিঙে দাঁড়িয়ে দু হাত মেলে দিয়েছি 
এই দ্যাখো আমি এখুনি হেলিকপ্টার হয়ে এই ছাদ থেকে 
ওই ছাদে উড়ে যাবো, উড়ে উড়ে দেখব চাঁদের মুখ কেমন
মর্গের মৃতের মুখের মতো...কিংবা
খাণ্ডব দহনের মতো দাউ দাউ করে জ্বলছে
বেশ্যাবাড়ির চাঁদ
এসো এসো তবে আমাকে ঠেলা দাও...


গণিকাগমনের মতো মিথ্যাচারে তোমাকে ভালবেসেছি
তবে না আমাকে পুড়তে দাও চাঁদের কাছে, 

শুধু পুড়তে পুড়তে একবার দেরাজের কাছে দাঁড়াব,

তোমার যাবতীয় নিভৃত গল্প- 
আজো তো রেখেছি তেমনি দেরাজে,
অনন্ত অন্ধকার থেকে আনত উঁকি দেয় স্কুল-বাড়ি
প্রিজন ভ্যানের মতো কোনও জাল-দেওয়া গাড়ি
আমার দগ্ধ শরীর বয়ে নিয়ে যাবে,
ভুট্টা ক্ষতের ভিতর দিয়ে, 
সেখানে লাল ফিতে বাঁধা দু-বেণী মাথায় কিশোরী এক
খেলা করে, বটের ছায়ায় মনোরম পৃথিবীর গল্পের মতো
রেডিও বাজে, আর অহরহ ঋতু পরিবর্তন হয় সেখানে,
অতঃপর গুমখুন করার আনন্দে আমি ঢুকে পড়ি মর্গে।



Popular posts from this blog

কাব্যগ্রন্থ ।একতারার সুর । পলাশ পোড়েল ।বই

  কাব্যগ্রন্থ : একতারার সুর । পলাশ  পোড়েল AKTARAR SUR by PALASH POREL book published on- 2020 ।  একটি বংeZIN প্রয়াস: ‘ই-বই’ প্রকাশকাল-ইং ২০২০ সাল।   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧     কৃষ্ণপ্রেমের অলীক সুতোয় যে সুর বেজে ওঠে কবি মনে তা যখন কাব্য রূপ নেয়- সেই মধুর মূর্ছনা, আছন্ন করে পাঠককে ।কবি পলাশ  পোড়েলের কবিতা শুধু আছন্নই করে না, বরং কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –‘একতারার সুর’ কাব্যগ্রন্থ।প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে- কবির  ভালোলাগা সকলের হয়ে ওঠে। কবিতা লেখার জগতে নব্য এক মননের চেষ্টা-একতারার সুর কাব্যগ্রন্থ- টি ।বংeZIN প্রকাশনী তাকে সম্মান করে । কবিতাগুলি যদি পাঠকের ভালো লাগে তবে-এই প্রচেষ্টা সফল । -        প্রকাশক  [বংeZIN প্রকাশনী]  

বই ।। গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি ।।পলাশ পোড়েল

কাব্যগ্রন্থ ।।  গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি।।   পলাশ পোড়েল   ই-বই PDF file ডাউনলোড করার জন্য বংeZIN e-BOOK ছবি লিঙ্কে ক্লিক করুন  ➧   কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি । পলাশ  পোড়েল বোষ্টমির প্রেম –সাধনা- আগুন রূপের-  নিত্য পুড়ে যাওয়া –কাব্য রূপে কবিতার ছন্দে ফুটে ওঠে - কাব্যগ্রন্থ : গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি –তে। কৃষ্ণপ্রেমের সুর বোষ্টমির হাতের একতারা হয়ে- এক নৈস্বর্গীক প্রেম চেতনার অনুরননে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করে । অনন্য অনুভুতির কবিতা- সুরে জেগে থাকার কবিতা –সাধনাকে জীবন করে বেঁচে থাকার গল্প বলে- গৌরদাসের আখড়ার বোষ্টমি   কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রকাশ আঙ্গিকের ছন্দে-   ভালোলাগা আর ভালোবাসা - সকলের মনে অনুরণন তোলে।

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১

বৃষ্টি সন্ধানী ।।অমিতাভ সেনগুপ্ত ।।ধারাবাহিক অনুবাদ-১ (Chasing the Monsoon-Alexander Frater থেকে অনুবাদ) (কপিরাইট- অমিতাভ সেনগুপ্ত ।। বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত নয়।)  (১) প্রথম যে শব্দ শুনি তা ছিল বৃষ্টি পড়ার। মনে হয় একধরনের ধাতব ভার ও ভর থাকে উষ্মমন্ডলীয় বর্ষার। সেটাই অঝোর ঝরছিল যখন আমার মায়ের প্রসব ব্যাথা শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপের ছোটো মিশন হাসপাতালে। বৃষ্টি ঝরেই চলেছিল তাঁর প্রসব কালে। আমি ভূমিষ্ঠ হবার কিছু পরেও শোঁ শোঁ আওয়াজে বাইরের ঘন পত্রগুচ্ছের আড়াল ঠেলে ঝালাই করা লোহার ছাদে বাজনা বাজাচ্ছিল বৃষ্টি। মাকে প্রসব করাচ্ছিলেন আমার বাবা। যে কোনো দিকেই বহু হাজার মাইলের মধ্যে উনিই তখন একমাত্র চিকিৎসক। সপ্তাহে বহুবার জরুরি কলে যেতেন মোটর বোটে । অধিকাংশ সময় প্রত্যন্ত গ্রাম, জনবসতিতে রোগীর কাছে পৌঁছতে পাড়ি দিতেন দূর দূরান্ত। সুতরাং তাঁর কাছে নিছক কৌতুহলের বিষয় ছিল না আবহাওয়া । ক্রমাঙ্ক করা কাচের বৃষ্টি মাপার যন্ত্র, হাসপাতালের বাগানে রাখা লড়ঝড়ে বায়ুমানযন্ত্র দিয়ে বৃষ্টি মাপতেন এবং নোটবন্দী করতেন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, রোদের ঘন্টা মিনিট, বাতাসের গতি ও নিশানা...